শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬

জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ এম.আর খান স্যারের ইন্তেকালে দেশজুড়ে শোকের ছায়া ...

ইন্নে লিল্লাহি ওয়েন্নেইলাইহি রাজিউন ...
জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ এম.আর.খান স্যার আর আমাদের মাঝে নেই, আজ ৫ নভেম্বর রোজ শনিবার , ঢাকা সেন্ট্রাল হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন ।
আল্লাহ তায়ালা এই মহা মনীষীকে জান্নাতে নসীব করুন ।

স্যারকে নিয়ে ডাঃ সরওয়ার ভাইয়ের ১ টি লেখা শেয়ার করলাম--

 সদ্য কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে এসে সাতক্ষীরায় প্র্যক্টিস করেন ডাঃমোঃ রফি খান। ভিজিট ৪ টাকা।
সময়টা গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক। অল্প সময়ে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই তরুন চিকিতসককে স্থানীয় লোকজন ধরে পৌরসভা নির্বাচনে দাড়া করিয়ে দিলেন। যথারীতি নির্বাচনে তিনি হেরেও গেলেন।
একটু অভিমান করে ভদ্রলোক পাড়ি দিলেন উচ্চশিক্ষার জন্যে বিলেতে। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরলেন ১৯৬৩ সালে। বিলেতিরা তাকে ছাড়তে রাজি না । তিনি তাদের বললেনঃ "এ দেশে আমার মতো আরও অনেক ডাঃ মোঃ রফি খান আছেন। আমার দেশে শিশু চিকিত্সকের বড় সংকট। আমাকে ফিরতেই হবে। "
ফিরলেন তিনি। সহকারী অধ্যাপক পদে যোগ দিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এক বছর পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে বদলি হয়ে এলেন। স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগ থেকে চারটি বিছানা (বেড) ধার করে কাজ শুরু করলেন " শিশুস্বাস্থ্য " বিভাগের। তখন রাজশাহী ছোট্ট শহর—কাদার শহর, মশা-মাছির শহর। স্ত্রীর শরীর খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তিনি নীতিবান মানুষ, বদলির তদবির করতে বিবেকে বাধে। পাঁচ বছর রাজশাহীতে ‘অজ্ঞাতবাস’ করে ঢাকা মেডিকেলে ফিরলেন ১৯৬৯ সালে।
১৯৭০ সালে পেলেন ঈপ্সিত সম্মান, অধ্যাপক পদ। তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানে তিনিই পেডিয়াট্রিকসের প্রথম অধ্যাপক। ১৯৬৫ সালে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত চেম্বারে টিকা দিতে শুরু করেছিলেন। এখন বাংলাদেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি সারা বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশ পোলিওমুক্ত। ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী নিধন তালিকায় তাঁর নামও ছিল। ভাগ্য ভালো, রাজাকারেরা তাঁর নাগাল পায়নি।
স্বাধীনতার পর পরিত্যক্ত শাহবাগ হোটেলে আইপিজিএমআর এ বাংলাদেশে মেডিকেল শিক্ষায় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কার্যক্রম শুরু হল। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিত্সক প্রফেসর নূরুল ইসলাম হলেন এর পরিচালক।
তাঁর অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত হলেন প্রফেসর ডাঃমোঃ রফি খান। সেই যে পিজির হাল ধরলেন, ছাড়লেন টানা ১৮ বছর পর, ১৯৮৮ সালে। এর মধ্যে এডিনবরা থেকে এফআরসিপি ডিগ্রিও অর্জন করলেন।
একবার মজা করে বললেনঃ "একটা সময় ছিল আমরা শিশুদের কোর্সে ছাত্র ভর্তি করব বলে চারজন পরীক্ষক বসে আছি, প্রার্থী এসেছে একজন। আর এখন শত শত ছাত্র, ভর্তির চেষ্টা করে। কেউ টেকে, কেউ অকৃতকার্য হয়।"
অবসর নেওয়ার পর অধিকাংশ মানুষ বুড়িয়ে যায়। শরীর চলতে চায় না, মন থাকে অবসাদগ্রস্ত। অথচ ডাঃ মোঃ রফি খানের বেলায় হলো উল্টো। তাঁর দিন শুরু হয় ভোর পাঁচটায়। ভোরের নামাজ শেষে বাড়ির ছাদে কিছুক্ষণ পায়চারি করেন। সেখানে একটি পাত্রে তিনি পাখির জন্য পানি ঢেলে রাখেন। কাক, শালিক, চড়ুই এসে বসে। ছাদে কিছু গাছগাছালি আছে, দুজনে এগুলোর পরিচর্যা করেন। নিচে নেমে কিছুক্ষণ কোরআন শরিফ ও হাদিস পড়েন। এরপর নাশতা শেষে টেলিভিশনে খবর দেখতে দেখতে দৈনিক পত্রিকা পড়ে ফেলেন।
নয়টার মধ্যেই ঢুকে পড়েন নৈমিত্তিক কর্মযজ্ঞে—নিবেদিতা নার্সিং হোম, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, মহিলা মেডিকেল কলেজ ও শিশু স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশনে যান রোগী দেখতে।
এসব প্রতিষ্ঠান তাঁর হাতেগড়া। এর বাইরেও রোগী দেখেন আইসিডিডিআরবির মতো আন্তর্জাতিক চিকিত্সা গবেষণাকেন্দ্রে।
সমাজসেবা তার ব্রত। পেনশানের টাকা দিয়ে মা ও শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক সম্মাননায় ভূষিত করেছে, পেয়েছেন একুশে পদক।
ডাঃ মোঃ রফি খান নামটা অপরিচিত লাগছে?
সংক্ষেপে ডাঃ এম আর খান। এই নামেই সবাই তাকে চেনেন।ডাঃ মোঃ রফি খান থেকে জাতীয় অধ্যাপক ডাঃ এম আর খান হয়ে ওঠা এই শিশু বন্ধুর আজ (১লা আগষ্ট)  ৮৮ তম জন্মদিন। স্যালুট, এই মহান মানুষটিকে ৷


লেখা -- ডা. সরওয়ার আলম সাংকু ।

SHARE THIS

0 মন্তব্য(গুলি):